বিড়াল পোষ মানানোর সেরা ১০টি উপায়। বিড়াল পোষার উপকারিতা
বিড়াল পোষ মানানোর উপায় সম্পর্কে আপনি কি জানতে চাচ্ছেন? আপনি যদি বিড়াল পোষ মানাতে কার্যকরী কিছু উপায় জানতে চান তাহলে আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
বিড়াল একটি গৃহপালিত এবং অনেকে শখের প্রাণী হওয়ায় অনেকেই বিড়াল পালন করে থাকে। তবে অনেকে এসব বিড়াল পোষ মানাতে চায়। তাই আজকের আর্টিকেলে বিড়াল পোষ মানাতে সেরা ও কার্যকরী কিছু উপায় নিয়ে এবং বিড়াল পালনের উপকারিতা সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করব।
পেজ সূচিপত্রঃ বিড়াল পোষ মানানোর উপায়
বিড়াল পোষ মানানোর উপায়
বিড়াল পোষা পছন্দ করে এমন কেউ নেই বললেই চলে। কেননা বিড়াল একটি
গৃহপালিত এবং অনেক শখের একটি প্রাণী। বিড়ালরা অনেক মায়াবী চেহারা
হয়ে থাকে যে কারণে কেউ বিড়ালকে অপছন্দ করতে পারে না। আবার অন্যান্য
প্রাণীর তুলনায় বিড়াল অনেক পরিষ্কার এবং সুন্দর। তাই বিড়াল প্রায় সবারই অনেক
পছন্দের বলা চলে। ছোট বাচ্চারা বিড়ালকে অনেক বেশি পছন্দ করে
এবং প্রায় সময় তাদের খেলার সাথী হিসেবে একসাথে খেলে।
শুধু ছোট বাচ্চারা নয়, বরং ছোট থেকে বৃদ্ধ প্রায় সকল মানুষই বিড়াল
অনেক পছন্দ করে। বাড়িতে থাকা বিড়ালকে অনেকেই পোষ মানাতে চাই।
কেননা যেকোনো পোষা প্রাণীকে পোষ মানাতে পারলে এ থেকে অনেক আনন্দ
পাওয়া যায় এবং এটা অনেকেরই খুব শখ। অনেকে চেষ্টা করেও বিড়ালকে পোষ মানাতে
পারে না। বিড়ালকে পোষ মানানোর কিছু কার্যকরী টিপস আছে যেগুলো জানলে আপনি
খুব সহজেই বিড়ালকে পোষ মানাতে পারবেন।
বাচ্চা বিড়ালঃ বাচ্চা বিড়ালকে খুব সহজেই পোষ মানানো যায়।
কেননা অনেক ছোট থেকেই যদি আপনার সাথে এবং পরিবারের সাথে বাচ্চা বিড়াল
থাকে তাহলে খুব সহজেই সেই পোষ বানানো সম্ভব হয়। আপনি চাইলে বড়
বিড়ালও পোষ মানাতে পারবেন তবে বাচ্চা বিড়াল পোষ মানানোর
সুবিধা অনেক বেশি হয়ে থাকে।
স্বাধীনভাবে রাখতে হবেঃ বিড়ালকে পোষ মানানোর আরেকটি ভালো উপায়
হচ্ছে বিড়ালকে তার ইচ্ছা মত থাকতে দিতে হবে। কেননা বিড়াল নিজের স্বাধীন মত
থাকতে অনেক বেশি পছন্দ করে।প্রথমদিকে এসে সে আপনার কাছে বেশিক্ষণ
থাকবে না এবং স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে না এটা স্বাভাবিক তাই তাকে নিজের স্বাধীন মত
ছেড়ে রাখতে হবে এবং সঠিক সময় খাবার দিতে হবে তাহলে আস্তে আস্তে সে যখন
স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে তখন খুব সহজেই আপনার পোষ মেনে যাবে।
সময় মত খাবার দিতে হবেঃ বিড়ালকে পোষ মানানোর সবচেয়ে কার্যকরী একটি
উপায় হচ্ছে এটি। কেননা পোষা প্রাণী গুলো নিজের খাবার নিজে সংগ্রহ করতে
পারে না যে কারণে তাদের অন্যের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। ঠিক তেমনি বিড়াল
সেগুলোর মধ্যে একটি। আর এজন্যই আপনাকে বিড়ালকে সময় মত খাবার দিতে
হবে। আপনি যখন আপনার বিড়ালকে সময় মতো খাবার দিবেন তখন সে আপনাকে খুব
ভালোভাবে চিনবে এবং আপনার উপর পরিপূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়বে এবং খুব সহজেই আপনার
পোষ মেনে যাবে।
বিড়ালের সাথে খেলতে হবেঃ বিড়ালকে পোষ মানাতে হলে অবশ্যই
বিড়ালের পিছনে কিছু সময় আপনাকে ব্যয় করতে
হবে। বিড়ালরা বাচ্চার মত দুষ্টুমি এবং খেলতে অনেক বেশি
ভালোবাসে। তাই আপনি যদি কিছু সময় তার সাথে দুষ্টুমি এবং খেলতে ব্যস্ত থাকেন
তাহলে আপনার সাথে বিড়ালের ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হবে এবং খুব
সহজেই পোষ মানবে।
আদর করতে হবেঃ বিড়ালকে কাছে নিয়ে আদর করতে পারলে বিড়াল আস্তে
আস্তে আপনার কাছে থাকতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করবে তখন খুব সহজেই আপনার পোষ
মেনে যাবে। এজন্য আপনার বিড়ালকে কিছু সময় আপনার কাছে রাখুন
এবং তার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিন। এভাবে প্রতিদিন নিয়মিত
বিড়ালকে আদর করতে পারলে সে তখন আপনার কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করবে
এবং আদর পাওয়ার আশায় থাকবে।
পরিচর্যা নিতে হবেঃ বাড়িতে বিড়াল পোষার জন্য যেমন তার খাবারের
দরকার হয় ঠিক তেমনি তার পরিচর্যার দরকার হয়। বিড়াল সাধারণত পরিষ্কার একটি
প্রাণী এবং তারা পরিষ্কার থাকতে বেশি পছন্দ করে। তাই বিড়ালকে
খাওয়ানোর পাশাপাশি তার পরিচর্যা করতে হবে। যেমন মাঝে মাঝে গোসল
করাতে হবে, নখ কাটতে হবে, বেশি লোমযুক্ত বিড়াল হলে সময় মতো
লোম কাটতে হবে, পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে ইত্যাদি।
অবহেলা করা যাবে নাঃ বিড়াল এমন একটি প্রাণী যে একদম অবহেলা
সহ্য করতে পারে না। বিড়াল সবসময়ই ভালোবাসা এবং আদর পেতে চাই, একসাথে খেলতে
চাই। তাই তাকে কখনো অবহেলা করা যাবে না। বিড়ালকে পোষ মানানোর
জন্য অবহেলার পরিবর্তে বেশি বেশি আদর করতে হবে।
বিড়ালকে মারধর করা যাবে নাঃ বিড়ালকে পোষ মারানোর জন্য মারধরক
পরিত্যাগ করতে হবে। যেহেতু তারা অবুঝ প্রাণী তাই অনেক সময় বেশি লাফালাফি
কিংবা খাবার-দাবার নষ্ট করতে পারে। তাই বলে রাগান্বিত হয়ে বিড়ালকে
মারধর করা যাবে না।বিড়ালকে মারধর করলে পোষ মানানোর বদলে সে বাড়ি
থেকে চলে যেতে পারে যেহেতু তারা অবহেলা সহ্য করতে পারে না। তাই
বিড়ালকে পোষ মানানোর জন্য আপনাকে বিড়ালের এতোটুকু উপদ্রব সহ্য করতে
হবে তাহলে আপনি খুব সহজে বিড়ালকে পোষ মানাতে পারবেন।
ভীতিকর পরিস্থিতি থেকে দূরে রাখতে হবেঃ বিড়ালকে পোষ মানাতে হলে
তাকে কখনো ভয় দেখানো যাবে না। অনেক সময় অনেকে মজার ছলে বিড়ালকে ভয়
দেখিয়ে থাকে এতে সে ভীত হয়ে আপনার কাছে পরবর্তীতে হয়তো আসতে চাইবে না এবং
আপনার সাথে বিড়ালে দূরত্ব তৈরি হবে। এছাড়াও বাড়িতে যদি কুকুর অথবা অন্য কোন
প্রাণী থাকে তাহলে সেগুলো থেকে বিড়ালকে রক্ষা করতে হবে অথবা তাদের থেকে
দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কেননা অনেক সময় দেখা যায় কুকুর
বিড়ালকে তাড়া করে থাকে এতে বিড়াল তাড়া খেয়ে ভীত হয়ে ওই বাড়িতে
আর আসতে চায় না।
বাড়িতে বিড়াল পোষা কি ভালো
বাড়িতে বিড়াল পোষা অনেক ভালো কেননা বিড়াল অত্যন্ত বন্ধু সুলভ, কোমল
এবং নমনীয় হৃদয়ের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন একটি প্রাণী। বাড়িতে
বিড়াল পোষার অনেক উপকারিতা হয়েছে। বিড়াল যদি আপনার আশেপাশে
থাকে তবুও আপনার অনেক উপকারে আসবে। এছাড়াও বিড়াল বাচ্চাদের
খেলার সাথী হিসেবেও পরিচিত। বিড়াল একটি হালাল প্রাণী তাই বাড়িতে
বিড়াল পোষাতে কোন সমস্যা নেই। বিড়াল একটি বন্ধু সুলভ প্রাণী
হওয়ায় বিড়াল কে বাচ্চা থেকে নিয়ে বৃদ্ধরা সকলেই পছন্দ করে। এজন্য অনেকে
বাড়িতে বিড়াল পুষে থাকে।
যারা বিড়াল পুষে থাকে তারা অবশ্যই ভালো মনের মানুষ হয়ে
থাকে। বিড়াল পোষার জন্য বিড়ালের কিছু উপদ্রব আপনাকে সহ্য করতে
হবে। আপনি যদি বিড়ালের এসব সামান্য কিছু উপদ্রব সহ্য করতে পারেন তাহলে
অবশ্যই বাড়িতে কমপক্ষে একটি করে বিড়াল পুষবেন কেননা বিড়াল আপনার
একাকীত্বের খুব ভালো সঙ্গীও হবে। যারা একাকিত্বে ভোগেন তারা বিড়াল
পুষতে পারেন। এগুলো ছাড়াও বাড়িতে বিড়াল পোষার অনেক উপকারিতা রয়েছে
যার সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
বিড়াল পোষা কি সুন্নত
বিড়াল পোষা সুন্নত কি না এই সম্পর্কে অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন। এর উত্তর হল
হ্যাঁ, বিড়াল পোষা সুন্নত। আসলে সুন্নত সেগুলোকেই বলা হয় যেগুলো আমাদের প্রিয়
নবী হযরত মুহাম্মদ (সা). পছন্দ করতেন এবং নিজে সেগুলো করতেন। যেহেতু আমাদের
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা). বিড়ালকে অনেক পছন্দ করতেন এবং ভালোবাসতেন তাই
নিঃসন্দেহে এটা বলা যায় যে বিড়াল পোষা একটি সুন্নত। বিড়াল পোষা সুন্নত কিনা এ
সম্পর্কে অনেকগুলো রেফারেন্স রয়েছে। যার মধ্যে বিশেষ কয়েকটি তুলে ধরা হলো-
একদা এক সময় হযরত মুহাম্মদ (সা). এর প্রিয় সাহাবী আব্দুর রহমান (রা.)
রাসূলুল্লাহ (সা) এর দরবারে যাওয়ার সময় তার জামার পকেটে করে একটি পোষা বিড়াল
নিয়ে গেছিলেন। গিয়ে সবার ভিতর যখন বসলেন তখন বিড়ালটি পকেট থেকে লাফ দিয়ে সবার
মাঝে চলে যায় এটি দেখে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) রসিকতা করে আব্দুর রহমান (রা.) কে
ইয়া আবু হুরায়রা অর্থাৎ বিড়ালের পিতা বলে আখ্যায়িত করলেন। এরপর থেকে তিনি
নিজেকে আবু হুরায়রা নামে পরিচয় দিতে বেশি পছন্দ করতেন।
হযরত মুহাম্মদ (সা). বলেন বিড়াল নাপাক প্রাণী নয় বরং এটি হালাল প্রাণী এবং এটি
আমাদের পাশে ঘন ঘন বিচরণ করে। (আবু দাউদঃ ৭৫; তিরমিজিঃ ৯২)। হযরত মুহাম্মদ (সা)
ওযু করার সময় ওযুর পাত্রের পানিও বিড়ালকে পান করিয়েছেন। কেননা বিড়াল অত্যন্ত
পরিষ্কার একটি প্রাণী।
একজন মহিলাকে জাহান্নামে দেওয়ার কারণ ছিল একটি বিড়ালকে সে আটকে রেখেছিল এবং
আটকে রাখার কারণে বিড়ালটি মারা যায়। এ থেকে বোঝা যায় বিড়ালকে কষ্ট দেওয়া
কিংবা আঘাত করা ঠিক নয়। যেহেতু আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) বিড়ালকে
অনেক ভালবাসতেন এবং পছন্দ করতেন তাই বিড়াল পোষা সুন্নত হিসেবে পরিগণিত।
বিড়াল পোষার উপকারিতা
বিড়াল অনেকে শখ করে পুষে থাকে আবার অনেকে প্রয়োজনে পুষে থাকে। তবে বর্তমান
সময়ে বিড়াল পোষা অনেকের কাছে একটি শখ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শুধুমাত্র শখই নয় বরং
আপনার মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতার জন্য এটি সাহায্য করে থাকে। এছাড়া বিড়াল পোষ মানানোর উপায় সম্পর্কে জানা থাকলে বিড়ালের প্রতি আরো বেশি ভালোবাসা তৈরি হবে।
- একাকীত্ব দূর করে-- আপনি যদি একাকিত্বে ভোগেন এবং আপনার বাড়িতে বা আশে পাশে যদি বিড়াল থাকে তাহলে আপনার একাকীত্বতা দূর হবে। যেহেতু বিড়াল সাধারণত লোকজনের আশেপাশে থাকতে বেশি পছন্দ করে তাই আপনার আশেপাশে বিড়াল থাকার কারণে আপনার কখনো একাকী লাগবে না। এজন্য একাকীত্ব এড়াতে বিড়াল পুষতে পারেন।
- মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে-- গবেষণায় প্রমাণিত বিড়ালের সান্নিধ্যে থাকলে মানসিক চাপ কমে যায়। কেননা বিড়ালের নরম স্পর্শ মানব দেহে মানসিক প্রশান্তি দেয় যার কারণে মানুষের চাপ কমাতে এটি সাহায্য করে থাকে।
- হৃদরোগে ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে-- গবেষণা করে পাওয়া গেছে বিড়ালের সান্নিধ্যে থাকলে যেমন মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে ঠিক তেমনি বিড়াল সাথে থাকে থাকলে মানব দেহের রক্তচাপ অথবা হৃদস্পন্দন ঠিক থাকে এবং যার কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
- ঘরের কীটপতঙ্গ থেকে রক্ষা করে-- আমরা মূলত ঘর থেকে ইঁদুর তাড়ানোর জন্যই বিড়ালের ব্যবহার বেশি করে থাকি। বিড়াল আমাদের ইঁদুরের অত্যাচার থেকে রক্ষা করে। ইঁদুর ছাড়াও বাড়িতে থাকা সমস্ত কীটপতঙ্গ থেকে ইঁদুর বাড়িকে রক্ষা করে থাকে।
- দায়িত্বশীলতা হতে সহায়তা করে-- বিড়াল পোষার জন্য আমাদের নিয়মিত তার যত্ন নেয়া প্রয়োজন যেমন সময় মতো তাকে খাবার দিতে হবে তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখতে হবে এছাড়া তার সঠিক পরিচর্যা করতে হবে। আর নিয়মিত এসব করার কারণে এক ধরনের অনুশীলন হয়ে যায় যা পরবর্তীতে দায়িত্বশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- বাচ্চাদের খেলাধুলার সাথী-- বাচ্চারা সাধারণত খেলতে ভালোবাসে আর বিড়ালরাও খেলতে অনেক ভালোবাসে। বাচ্চার খেলার সাথী হিসেবে বিড়াল অনেক পরিচিত। এতে বাচ্চা যেমন খেলার সঙ্গী পায় ঠিক তেমনি বাচ্চাদের বিনোদনের ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা পালন করে।
বাড়িতে বিড়াল পোষার এতো উপকারিতা থাকার কারণে আপনি চাইলে খুব সহজেই
বাড়িতে বিড়াল পোষা শুরু করতে পারেন। বিড়াল আপনার অনেক উপকারে আসবে যদি আপনি
তাকে সঠিকভাবে তার পরিচর্যা বা যত্ন নেন।
কিভাবে বিড়ালের যত্ন নিতে হয়
বিড়াল পোষার জন্য অবশ্যই বিড়ালের যত্নের প্রয়োজন যা বিড়ালের পরিচর্যা নামেও
পরিচিত। বিড়াল অবুঝ প্রাণীদের মধ্যে একটি যারা নিজেরা নিজেদের যত্ন নিতে পারে
না। তবে বিড়াল একটি পরিষ্কার প্রাণী হওয়ায় এর সামান্য কিছু যত্ন ছাড়া
অতিরিক্ত তেমন কিছু যত্নের প্রয়োজন পড়ে না। বিড়াল বসত বাড়ি ছাড়া অন্য কোথাও
থাকতে পারে না। তাই বসতবাড়িতে বিড়াল পোষার জন্য বিড়ালের কিছু যত্ন বা পরিচর্যা
নিতে হয়। যেমন-
নির্দিষ্ট থাকার ব্যবস্থা করতে হবেঃ বাড়িতে বিড়াল পুষতে হলে বিড়ালের
জন্য একটি নির্দিষ্ট বাসস্থান তৈরি করতে হবে। তার জন্য নির্দিষ্ট বাসস্থান থাকলে
তার পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ঘুমের অনেক সুবিধা হবে।
সময় মত খাবার দিতে হবঃ বিড়াল পুষতে হলে অবশ্যই সময় মত তাকে খাবার দিতে
হবে। শুধু বিড়ালই নয় বরং বাড়িতে পোষা সকল প্রাণীকেই সময় মতো খাবার দিতে হয়।
বিড়ালের পরিচর্যার সর্বপ্রথম এবং প্রধান বিষয় হচ্ছে বিড়ালকে সময় মত খাবার
দেওয়া। আমরা সাধারণত প্রতিদিন খাবারের উচ্ছিষ্ট অংশ গুলো বিড়ালের খাবার হিসেবে
দিয়ে থাকি। শুধুমাত্র বেঁচে যাওয়া খাবার বিড়ালের জন্য যথেষ্ট নয় বরং বিড়ালকে
অতিরিক্ত বাড়তি পুষ্টিকর খাবার খেতে দিতে হবে।
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাওয়াতে হবেঃ বেঁচে থাকার জন্য পানি একটি অপরিহার্য
উপাদান। বেঁচে থাকার জন্য মানুষের যেমন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি প্রয়োজন হয় ঠিক
তেমনি পশুপাখির জন্যও পানির প্রয়োজন।বিড়ালকে প্রতিদিন খাবার খাওয়ানোর পর
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাওয়াতে হবে। বিশেষ করে গরমের সময় বিড়ালকে বেশি পরিমাণে
পানি খাওয়াতে হবে। খাবার খাওয়ানোর সময় ছাড়াও এর বাইরে বিড়াল কে পানি
খাওয়াতে হবে।
গোসল করাতে হবেঃ বিড়াল সাধারণত অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় অধিক পরিষ্কার
পরিচ্ছন্ন হয়ে থাকে তাই বিড়ালকে বাড়তি পরিষ্কার করার প্রয়োজন পড়ে না। তবে
মাঝে মাঝে বিড়ালকে গোসল করাতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।
এতে বিড়ালের গায়ে থাকা লোমগুলো অনেক পরিষ্কার হবে কেননা লোমের ভিতরে ময়লা
থাকতেও পারে।
নখ কাটতে হবেঃ বাড়িতে থাকা বিড়ালের নখের দিকেও নজর রাখতে হবে। নখ যখন
বড় হয়ে যাবে তখন বাড়তি নখগুলো কেটে দিতে হবে।বিড়াল যেহেতু বেশিরভাগ সময়
লোকজনের আশেপাশে এবং কাছাকাছি থাকে তাই তার নখের আচড়ে শরীরে ক্ষত সৃষ্টি হতে
পারে। প্রত্যেক দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে সময় মত নখগুলো কেটে দিলে বিড়ালের
আঁচড় থেকে বিপদের আশঙ্কা কমে যায়।
লিটার বক্স ব্যবহার করতে হবেঃ বাড়িতে বিড়াল পোষার জন্য লিটার বক্স
ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরী।কেননা লিটার বক্স না থাকলে বিড়াল বর্জ্য পরিত্যাগের
জন্য সঠিক জায়গা পাবে না।বাড়িতে একটি নির্দিষ্ট স্থানে লিটার বক্স রাখা
প্রয়োজন এবং বিড়ালকে ওই লিটার বক্সে বর্জ্য পরীত্যগের জন্য অভ্যাস করানো উচিত
এতে বাড়িঘর নোংরা হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। লিটার বক্সটি প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট
সময়ে পরিষ্কার করতে হবে।এছাড়াও সপ্তাহে একবার এই লিটার বক্সটি ডিটারজেন্ট দিয়ে
ধুতে হবে যাতে বিড়ালের কোনোরকম রোগ জীবাণুর আশঙ্কা না থাকে।
টিকা দিতে হবেঃ ছোট বাচ্চাদের যেমন টিকা দিতে হয় ঠিক তেমনি বিড়ালকে
সুস্থ রাখতে টিকা দিতে হয়। তাই যেকোনো পশু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিড়ালের
স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বিড়ালের জন্য উপযোগী টিকা দিতে হবে।
ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত ওষুধ খাওয়ানো যাবে নাঃ অনেক সময় বিড়ালের
শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় তখন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে থেকে বিড়ালকে ওষুধ
খাওয়ানো যাবে না। আবার মাঝে মাঝে বিড়াল অনেক ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ খেয়ে ফেলে
এক্ষেত্রে নিজে থেকে কোন কিছু না করে খুব শীঘ্রই পশু চিকিৎসকের কাছে গিয়ে
বিড়ালের চিকিৎসা করাতে হবে।
স্পাইয়িং এবং নিউটারিং করাতে হবেঃ বাড়িতে থাকা পোষা বিড়াল গুলোকে অবশ্যই
সময়মতো স্পাইং এবং নিউটারিং করাতে হবে। স্পাইয়িং এবং নিউটারিং এক্ষেত্রে স্ত্রী
বিড়ালদের স্পাইয়িং করাতে হবে এবং পুরুষ বিড়ালদের নিউটারিং করাতে হবে। স্পাইয়িং
এবং নিউটারিং বলতে বুঝায় অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে স্ত্রী এবং পুরুষ বিড়ালদের
প্রজননতন্ত্র ফেলে দেওয়া। বিড়ালের বয়স ৪-৫ মাস হলে অথবা ওজন ২ কেজির বেশি হলে
স্পাইয়িং ও নিউটারিং করাতে হবে।
বিড়াল মোটা করার উপায়
প্রত্যেকে চাই তার পোষা প্রাণীগুলো স্বাস্থ্যবান বা একটু মোটা হোক। তেমনি বাড়িতে পোষা
একটি প্রাণী বিড়াল যা অনেকেই চাই যে মোটা করতে। বিড়াল পোষ মানানোর উপায় জানার পাশাপাশি আমাদের বিড়ালের মোটা হওয়া কতটুকু প্রয়োজন সেগুলো জানতে হবে। তবে জেনে রাখা
ভালো প্রাণীরা মোটা হলেই যে ভালো থাকবে তা কিন্তু নয়। প্রত্যেকটি
প্রাণীর ভালো থাকার জন্য সুস্থ হওয়া প্রয়োজন। একটি সুস্থ বিড়াল অপর একটি
মোটা অসুস্থ বিড়ালের থেকে অনেক স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করবে।
মোটা বিড়াল
গুলো অসুস্থ প্রকৃতির হয় কেননা তার মোটা স্বাস্থ্যের জন্য নানা ধরনের
সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই বিড়ালকে মোটা করতে না চেয়ে বিড়ালের স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবা প্রয়োজন
যেন বিড়াল সুস্থ থাকে।সাধারণত দেশি বিড়াল গুলো একটু চিকন হয়ে
থাকে। বয়স দুই বছরের বেশি না হলে সাধারণত মোটা হতে দেখা যায় না। তবে
বিদেশী বিড়াল গুলো স্বাস্থ্যকর মোটা আকারের হয়। একটা বিষয়
খেয়াল রাখতে হবে বিড়াল সুস্থ এবং স্বাভাবিক থাকলেই চলবে কেননা বয়স
বাড়ার সাথে সাথে ধীরে ধীরে তার স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে।
বিড়ালকে মোটা করতে গিয়ে যেন তার স্বাস্থ্যের ক্ষতি না হয়ে
যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হয়।তবে বিড়ালের স্বাস্থ্যের
উন্নতির জন্য বিড়ালকে নিয়মিত কিছু খাবার খাওয়ালে তার স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে
এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে ধীরে ধীরে সে মোটা হতে শুরু করবে। বিড়ালকে
প্রোটিন যুক্ত খাবার বেশি খাওয়াতে
হবে।কেননা প্রোটিন স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য
করে। বিড়ালরা যেহেতু মাংসাশী প্রাণী তাই তাদের মাছ-মাংস খাওয়াতে
হবে।
তবে আপনার খাবার থেকে বেঁচে যাওয়া মাছ মাংস নয় বরং বিড়ালের
জন্য আলাদা করে মাছ মাংস সিদ্ধ করে বিড়ালকে খাওয়াতে হবে। সিদ্ধ
করা মাছ মাংস তে কোন রকম লবণ, ঝাল, হলুদের গুঁড়া ব্যবহার করা যাবে
না। আবার মাঝে মাঝে বিড়ালের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে কিছু সবজি খাওয়াতে পারেন
যেমন মিষ্টি কুমড়া, পেঁপে ইত্যাদি। এছাড়াও বিড়ালের জন্য পুষ্টিকর কিছু
খাবার মাঝে মাঝে খাওয়াতে পারেন। এভাবে নিয়মিত বিড়ালকে খাওয়ালে তার
স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে এবং সুস্থ থাকবে।
বিড়ালের প্রিয় খাবার কি
বিড়ালের প্রিয় খাবার কি এই সম্পর্কে বলতে গেলে, আসলে বিড়াল
একটি মাংসাশী প্রাণী হওয়ায় বিড়াল মাছ-মাংস খেতে বেশি পছন্দ করে
থাকে। তবে বিড়ালকে কখনো কাঁচা মাছ মাংস খাওয়াতে যাবেন
না। বিড়ালকে খাওয়ানোর জন্য মাছ মাংসগুলো আগে ভালোভাবে সিদ্ধ করে নিতে
হবে। কেননা কাঁচা মাছ মাংস এমন অনেক ধরনের জীবাণু থাকে যা বিড়ালের
স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে। তাই মাছ মাংস খাওয়ানোর আগে সেটা রান্না
করে নিতে হবে।
তবে মাছ-মাংস রান্নার সময় তাতে লবণ, ঝাল, হলুদ এসব দেয়া যাবে
না। শুধুমাত্র সিদ্ধ করা মাছ-মাংসই বিড়ালের জন্য অত্যন্ত
উপযোগী। আবার বিড়ালকে প্রতিদিন শুধু মাছ মাংস খাওয়ালেও সমস্যা। এর
বাইরে মাঝে মাঝে সবজি, অতিরিক্ত পুষ্টিকর খাবার যেগুলো দোকানে বা বাজারে পাওয়া
যায় সেগুলো খাওয়াতে হবে। এতে বিড়ালের মুখের রুচি এবং স্বাস্থ্য
দুটোই ঠিক থাকবে।
বিড়াল পোষার অপকারিতা
বিড়াল পোষার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা এতক্ষণ জানলাম। তবে বাড়িতে বিড়াল
পোষার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি বিড়াল পোষার কিছু অপকারিতাও রয়েছে।
চলুন এবার আমরা বিড়াল পোষার কিছু অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই।
- এলার্জি সমস্যা-- বিড়ালের ত্বক এবং লোম থেকে অনেকের সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই যাদের বিড়ালের লোমে বা ত্বকে এলার্জি রয়েছে তারা বিড়াল পোষা থেকে বিরত থাকবেন।
- নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি-- বিড়াল পালনের জন্য অনেকের বিভিন্ন রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দেয়।বিড়ালের এক ধরনের টক্সোপ্লাজমোসিস সংক্রমক রোগ রয়েছে যা বিড়ালের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। গর্ভবতী নারীদের জন্য এই সংক্রমণটা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
- ব্যয়বহুল পরিচর্যা-- বাড়িতে বিড়াল পোষা ব্যয়বহুল একটা বিষয়।বিড়াল পুষতে হলে বিড়ালের জন্য প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত খরচ যেমন খাদ্য, চিকিৎসা ইত্যাদি অন্যান্য বিষয়ের জন্য এটি একটি ব্যয়বহুল বিষয়। এতে আর্থিকভাবে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
- দীর্ঘ সময়ের দায়িত্ব-- বাড়িতে বিড়াল দীর্ঘ সময়ের জন্য পুষতে হয়। দীর্ঘ সময় ধরে বিড়ালের পরিচর্যা এবং দেখ ভালের প্রয়োজন রয়েছে যা একটা সময় বিরক্তি কর মনে হতে পারে।
- বিড়ালের উপদ্রব-- স্বাভাবিকভাবেই বিড়াল একটি চাঞ্চল্যকর প্রাণী। বিড়াল অনেক সময় ঘরের ভেতর লাফালাফি শুরু করে যা লোকজনের কাছে বিরক্তি লাগে। আবার বাড়িতে পোষা বিড়াল ঘরের জামাকাপড়, আসবাবপত্র ও অন্যান্য জিনিসের ক্ষতি করে থাকে যা অতিমাত্রায় বাড়লে বিড়ালের উপর রাগ সৃষ্টি হয়। বাড়িতে বিড়াল পুষতে হলে বিড়ালের এসব উপদ্রব সহ্য করা লাগবে। আপনি যদি বিড়ালের এরকম কিছু উপদ্রব সহ্য করতে না পারেন তাহলে বিড়াল পোষা থেকে বিরত থাকবেন।কেননা বিড়ালরা সাধারণতই এরকম চঞ্চল প্রকৃতির হয়ে থাকে।
উপরিউক্ত কিছু অপকারিতা বা উপদ্রব যদি আপনি সহ্য করতে পারেন তাহলে
নির্দ্বিধায় বাড়িতে বিড়াল পুষতে পারবেন। আর যদি আপনি মনে করেন বিড়ালের
এরকম কিছু অপকারিতা বা ঝামেলাগুলো আপনি সহ্য করতে পারবেন না
তাহলে বিড়াল পুষবেন না। কেননা বিড়াল অবহেলা এবং মারধর সহ্য করে না
নিয়মিত আপনার কাছে থেকে অবহেলা পেলে বিড়াল আপনার কাছ থেকে দূরে সরে
যাবে এবং আপনি বিড়ালকে পোষ মানাতে পারবেন না।
লেখকের শেষ কথাঃ বিড়াল পোষ মানানোর উপায়
বিড়াল পোষ মানানোর উপায় সম্পর্কে কমবেশি অনেকের ধারণা রয়েছে যা
বিড়াল পুষতে আগ্রহ সৃষ্টি করে। আবার কেউ কেউ বিড়াল
পুষতে চাই অথচ এ বিষয়ে তেমন কোন ধারনা নেই। তাই আজকের আর্টিকেলটি
তাদের উদ্দেশ্যেই পোস্ট করা হয়েছে যারা বিড়াল পুষতে চাই। বিড়ালকে
যদি আপনি পোষ মানাতে চান এবং বাড়িতে বিড়াল পুষতে চান তাহলে বিড়ালের
কিছু উপদ্রব আপনাকে সহ্য করা লাগবে। উপরের আলোচনা থেকে
নিয়ম মেনে যদি আপনি বিড়াল পুষতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনি বাড়িতে
সঠিকভাবে বিড়াল পোষ মানাতে পারবে।
প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলে আমি বিড়ালকে কিভাবে পোষ মানাতে হয় এবং
বিড়াল সম্পর্কে আরো যাবতীয় তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আর্টিকেলটি পড়ে
যদি আপনি উপকৃত হন তাহলে অন্যদের মাঝে শেয়ার করে দিন যাতে তারাও এ
সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারে এবং উপকৃত হতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য
যাবতীয় বিষয়ে সকল তথ্য পেতে ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করার আমন্ত্রণ
রইল। এতক্ষন ধরে মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য
ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url