অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা - বাণিজ্যিকভাবে অ্যাভোকাডো চাষ পদ্ধতি

পার্সিমন ফলের উপকারিতা । বাংলাদেশে পার্সিমন ফলের চাষ পদ্ধতিঅ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা সম্পর্কে আপনি কি জানতে চাচ্ছেন? আপনি যদি অ্যাভোকাডো ফলের যাবতীয় স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। অ্যাভোকাডো ফলের গুনাগুন সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

অ্যাভোকাডো-ফলের-উপকারিতা
অ্যাভোকাডো এমন একটি ফল যাতে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান। এতে বিদ্যমান নানা পুষ্টি উপাদানের কারণে এই ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতাও অনেক। তাই এই আর্টিকেলে অ্যাভোকাডো ফলের যাবতীয় উপকারিতা এবং বাণিজ্যিকভাবে অ্যাভোকাডো চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

পেজ সূচিপত্রঃ অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা

অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা

অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা সম্পর্কে জানলে আপনি অবাক হবেন।অ্যাভোকাডো একটি ফল যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান। এই অ্যাভোকাডো ফলে ২০ রকমের ভিটামিন এবং খনিজসহ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। পুষ্টি উপাদানের ভরপুর এই অ্যাভোকাডো ফলের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা হয়েছে। নিচে অ্যাভোকাডো ফলের সকল স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলো  করা হলো-

হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করেঃ অ্যাভোকাডো রক্ত কমাতে, ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে এবং ধমনীর ফলকের ধীর বিকাশ ঘটাতে অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। মাঝেমাঝে অনেকের অস্বাভাবিক হার্ট স্পন্দন বা হার্ট অ্যাটাক দেখা দেয়। তবে নিয়মিত অ্যাভোকাডো ফল খেলে এই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অথবা অস্বাভাবিক হার্ট স্পন্দন কমে যায়।এছাড়াও নিয়মিত অ্যাভোকাডো ফল খেলে স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমে যায়।

ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করেঃ নিয়মিত অ্যাভোকাডো ফল খেলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কেননা অ্যাভোকাডোতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, ভিটামিন ই এবং উদ্ভিজ্জ খনিজ যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে।

হজমে সাহায্য করেঃ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যার মধ্যে হজমে সমস্যা একটি। হজমের সমস্যার কারণে পেট ব্যথা, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি আরো নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তবে আপনি যদি প্রতিদিনের খাবার তালিকায় অ্যাভোকাডো ফল রাখেন তাহলে আপনার খাবার খুব সহজে এবং ভালোভাবে হজম হয়ে যাবে। কেননা অ্যাভোকাডো ফলে রয়েছে ১০ গ্রামের মত ফাইবার।আর এই ফাইবার হজমে সাহায্য করে থাকে।

ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ ওজন কমানোর জন্য অনেক ধরনের খাবার এবং ফলমূল রয়েছে। অ্যাভোকাডো হলো তার মধ্যে একটি। ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে ক্যালরির ভূমিকা অনেক বেশি থাকে। প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে এভোকাডো ফল খেলে বেশি তৃপ্তি পাওয়া যায় যার কারণে পরবর্তীতে খাওয়ার ইচ্ছা অনেক কমিয়ে দেয়। তাই আপনি যদি প্রতিদিন নিয়মিত অ্যাভোকাডো ফল খান তাহলে এটি আপনাকে বেশি ক্যালরি খাবার হাত থেকে রক্ষা করবে। এর ফলে আপনাকে স্বাভাবিকভাবেই আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

চুল এবং ত্বকের যত্নে সহায়তা করেঃ অ্যাভোকাডো ফলে থাকা পুষ্টি উপাদান ত্বক ময়েশ্চারাইজার করতে এবং ত্বকে লাবণ্য আনতে সাহায্য করে। তাছাড়া ত্বক এবং চুলের যত্নের জন্য প্যান্টোথেনিক এসিড (ভিটামিন বি ৫) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। অ্যাভোকাডো ফলে ৪৫ % এসিডের আরডিএ থাকে যা চুল এবং ত্বকের যত্নে সাহায্য করে থাকে।

দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করেঃ নিয়মিত অ্যাভোকাডো ফল খেলে চোখের দৃষ্টি শক্তি উন্নত হয়। অ্যাভোকাডো ফলে চোখের জন্য দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেরোটিনয়েড থাকে যার নাম হলো- লুটেন এবং জেক্সানথিন। যা চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে এবং চোখের ছানি পড়া রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করেঃ নিয়মিত অ্যাভোকাডো ফল খেলে রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কেননা এই অ্যাভোকাডো ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি। আর এই ভিটামিন বি আমাদের শরীরকে রোগ জীবাণু থেকে রক্ষা করে।

ভালো ঘুম হতে সাহায্য করেঃ নিয়মিত অ্যাভোকাডো ফল খেলে ভালো ঘুম হতে সাহায্য করবে।কেননা অ্যাভোকাডো ফলে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম। আর এই ম্যাগনেসিয়াম শরীরের সমস্ত ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে এবং যার কারণে অনেক ভালো ঘুম হয়।

অ্যাভোকাডো ফলের পুষ্টি উপাদান

অ্যাভোকাডো ফলের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে এবার জেনে নেওয়া যাক। এই অ্যাভোকাডো ফলে রয়েছে বিভিন্ন রকমের ভিটামিন এবং খনিজ। এর পাশাপাশি অ্যাভোকাডোতে রয়েছে উপকারী অনেক ভেষজ উপাদান। এছাড়াও অ্যাভোকাডোতে রয়েছে স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং ফাইবার যা একটি সুষম খাদ্যের পুষ্টিকর সংযোজন। এগুলো ছাড়াও অ্যাভোকাডো রয়েছে আরও অনেক পুষ্টি উপাদান। নিচে অ্যাভোকাডো ফলের সকল পুষ্টি উপাদান গুলোর একটি তালিকা দেয়া হলো।

প্রতি ১০০গ্রাম অ্যাভোকাডোতে রয়েছেঃ

  • ক্যালোরি  ১৬০ গ্রাম
  • প্রোটিন  ২ গ্রাম
  • মোট চর্বি  ১৫ গ্রাম
  • সম্পৃক্ত চর্বি  ২.১ গ্রাম
  • ম্যানুস্যাচুরেটেড ফ্যাট  ৯.৮ গ্রাম
  • পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট  ১.৮ গ্রাম
  • কোলেস্টেরল ০ মিলিগ্রাম
  • শর্করা  ৯ গ্রাম
  • খাদ্য তালিকাগত ফাইবার ৭ গ্রাম
  • চিনি  ০.৭ গ্রাম
  • ভিটামিন এ  ১৪৬ IU
  • ভিটামিন সি  ১০ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন ই  ২.১ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন কে  ২১ মিলিগ্রাম
  • ফোলেট  ৮১ মিলিগ্রাম
  • পটাশিয়াম  ৪৮৫মিলিগ্রাম
  • ম্যাগনেসিয়াম  ২৯ মিলিগ্রাম
  • আয়রন  ০.৬ মিলিগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম  ১২ মিলিগ্রাম
  • দস্তা  ০.৬ মিলিগ্রাম

অ্যাভোকাডোর বাংলা নাম কি

অ্যাভোকাডোর বাংলা নাম কি এ সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানে না। তাই অনেকেই জানতে চাই যে অ্যাভোকাডোর বাংলা নাম কি অথবা বিদেশি এই ফলটা বাংলাদেশে কি নামে পরিচিত। অ্যাভোকাডোর বাংলা নাম হল মাখন ফল। এছাড়াও এভোকাডো ফল কুমির নাশপাতি হিসেবেও পরিচিত কেননা এই ফলটির খোসা দেখতে কুমিরের গায়ের মত অমসৃন। আর অ্যাভোকাডোর বৈজ্ঞানিক নাম হলো (Persea americana) ।

অ্যাভোকাডো খেলে কি ওজন বাড়ে

অ্যাভোকাডো খেলে কি ওজন বাড়ে এ সম্পর্কে অনেকেই অজানা। অ্যাভোকাডো ফলের রয়েছে নানা পুষ্টি উপাদান তাই এই ফলটি নিয়মিত খেলে প্রচুর পরিমাণে স্বাস্থ্য উপকারিতা লাভ করা যায়।তবে অ্যাভোকাডো খাওয়ার এত এত উপকারিতার ভিতরে ওজন বাড়ার উপকারিতা রয়েছে কিনা এটি জানা আমাদের জানা জরুরী। আমরা ইতিপূর্বে অ্যাভোকাডো ফলের যাবতীয় উপকারিতা সম্পর্কে উপরে জেনেছি।

তবে এই উপকারিতা গুলোর ভিতরে কোথাও ওজন বাড়ানোর উপকারিতা উল্লেখ নেই। তাই আমরা বলতে পারি এভোকাডো খেলে ওজন বাড়ে না বরং অ্যাভোকাডো খেলে ওজন কমে।কেননা ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে ক্যালরির ভূমিকা অনেক বেশি থাকে। কিন্তু অ্যাভোকাডোতে ক্যালরির পরিমাণ অনেক কম থাকায় এটি ওজন কমাতে বেশি সাহায্য করে থাকে।
প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে অ্যাভোকাডো ফল খেলে বেশি তৃপ্তি পাওয়া যায় যার কারণে পরবর্তীতে খাওয়ার ইচ্ছা অনেক কমিয়ে দেয়। তাই আপনি যদি প্রতিদিন নিয়মিত অ্যাভোকাডো ফল খান তাহলে এটি আপনাকে বেশি ক্যালরি খাবার হাত থেকে রক্ষা করবে। এর ফলে আপনাকে স্বাভাবিকভাবেই আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে। আলোচনা থেকে আমরা বুঝলাম যে অ্যাভোকাডো খেলে ওজন বাড়ে না বরং ওজন কমে।

দিনে কয়টি অ্যাভোকাডো খাওয়া যাবে

দিনে কয়টি অ্যাভোকাডো খাওয়া যাবে এই সম্পর্কে জানা জরুরি কেননা অ্যাভোকাডোর সঠিক উপকারিতা পেতে সঠিক পরিমানে অ্যাভোকাডো খাওয়া প্রয়োজন। যদি নিয়মিত এই অ্যাভোকাডো ফল খাওয়া যায় তাহলে এর সকল স্বাস্থ্য উপকারিতা ভোগ করা যাবে। তবে এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে প্রতিদিন কয়টি করে অ্যাভোকাডো ফল খাওয়া যাবে।
অ্যাভোকাডো-ফলের-উপকারিতা
দৈনিক ১/২ টি করে অ্যাভোকাডো ফল খাওয়া যাবে। আপনি চাইলে প্রতিদিন ১টি করে অ্যাভোকাডো ফল খেতে পারেন আবার যদি আপনি চান তাহলে প্রতিদিন ২টি করেও অ্যাভোকাডো ফল খেতে পারেন। আপনি যদি নিয়মিত অ্যাভোকাডো ফল খান তাহলে এর পুষ্টির কারণে অনেক স্বাস্থ্য সুবিধা ভোগ করতে পারবেন যা ইতিপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।

অ্যাভোকাডো ফল কে একটি সুপার ফুড হিসেবে ধরা যায় কারণ এই অ্যাভোকাডোতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং ফাইবার থাকে। তাই প্রতিদিন যদি ১/২ টি আভোকাডো খাওয়া যায় তাহলে আপনি প্রয়োজনীয় সকল স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলো ভোগ করতে পারবেন।

অ্যাভোকাডো কোথায় পাওয়া যায়

অ্যাভোকাডো কোথায় পাওয়া যায় এ সম্পর্কে অনেকেই জানে না। খাওয়ার জন্য অনেকে অ্যাভোকাডো ফল কোথায় পাওয়া যায় এ সম্পর্কে জানতে চাই। অ্যাভোকাডো হলো মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকার একটি স্থানীয় উদ্ভিদ। তার মানে মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকায় এই অ্যাভোকাডো ফলের প্রচুর পরিমাণে চাষ হয়ে থাকে। মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকা সহ অন্যান্য দেশেও এই অ্যাভোকাডো ফলের চাষ হয়ে থাকে।

অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও বর্তমানে এই অ্যাভোকাডো ফলের চাষ হচ্ছে। তাই আমাদের দেশে বর্তমানে বিদেশি আভোকাডো ফলের পাশাপাশি দেশে উৎপাদিত অ্যাভোকাডোও পাওয়া যাচ্ছে।অ্যাভোকাডো ফল বড় বড় বাজারে অথবা শপিংমল এবং বড় সুপার শপে পাওয়া যায়। আপনি যদি অ্যাভোকাডো ফল কিনতে চান তাহলে বাজারে, শপিংমলে অথবা বড় কোন সুপারশপে গিয়ে খোঁজ করতে পারেন।

অ্যাভোকাডো ফলের দাম কত

অ্যাভোকাডো ফলের দাম শুনলে অনেকেই চমকে যাবেন। আসলে চমকে যাওয়ার মতই কেননা প্রতি কেজি অ্যাভোকাডো ফল বিক্রি হয় ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এই অ্যাভোকাডো ফলের এত দাম হওয়া সত্বেও এই ফলের চাহিদাও রয়েছে অনেক। কেননা এই ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতা যে বিশাল। এই ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বড় উপকারিতা হলো হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।
তবে অ্যাভোকাডো ফল খেতে যে অনেক সুস্বাদু তা কিন্তু নয়। এই ফলটির মাত্রাতিরিক্ত চাহিদার কারণ হলো এর উপকারিতা। আবার এরকমও শোনা যায় যে এই ফলের উপকারিতার কারণে আমাদের এশিয়ার মধ্যে অবস্থিত দেশ শ্রীলংকায় নাকি প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে এই অ্যাভোকাডো ফলের গাছ রয়েছে। অ্যাভোকাডো ফলের যাবতীয় স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলো পেতে নিয়মিত এই অ্যাভোকাডো ফল খাওয়া অভ্যাস করুন।

অ্যাভোকাডো খাওয়ার নিয়ম

অ্যাভোকাডো ফল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরী। কেননা এই ফলের সকল স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলো পেতে হলে আমাদের এই ফল খাওয়ার সকল নিয়ম গুলো জেনে নিতে হবে। আমরা উপরের আলোচনা থেকে জেনেছি যে প্রতিদিন ১/২ টি অ্যাভোকাডো ফল খাওয়া যাবে। এবার আসি অ্যাভোকাডো ফল কিভাবে খাওয়া যায় বা কিভাবে খেতে হবে।

অ্যাভোকাডো ফল কিন্তু খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু নয়। এই ফলের এত চাহিদা শুধুমাত্র এর স্বাস্থ্য উপকারিতার কারণে। তাই আপনি যদি অ্যাভোকাডো ফল খেতে চান তাহলে বিভিন্ন খাবারের সাথে এই ফলটি যুক্ত করতে পারবেন। অ্যাভোকাডো ফল খেতে হলে প্রথমে এই ফলটি অর্ধেক করে কেটে নিতে হবে। এই ফলের ভিতরে একটি বড় আকারের বীজ থাকবে সেটা খাওয়ার যোগ্য নয় তাই সেটা ফেলে দিতে পারেন।
এরপর এই ফলটির উপরিভাগের খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে। এরপর ফালি ফালি করে কেটে নিতে হবে এবং এভাবে এটি খাওয়ার যোগ্য। অ্যাভোকাডো ফল সকালে নাস্তার সাথে যেমন রুটির সাথে, অন্যান্য সবজি অথবা যে কোন কিছুর সাথে এই অ্যাভোকাডো ফল যুক্ত করতে পারেন। এছাড়াও ভাতের সাথে এই অ্যাভোকাডো ফল সালাদ হিসেবে যুক্ত করতে পারেন।

আবার দুধ, খেজুর, বাদাম, মধু, কিসমিস ইত্যাদির সাথে এই অ্যাভোকাডো ফল ব্লেন্ডার করে ভালো ভাবে মিক্স করে খেতে পারেন। এতে করে যেমন অ্যাভোকাডো ফলের সমস্ত উপকারিতা পাওয়া যাবে পাশাপাশি দুধ, মধু, খেজুর ইত্যাদির সকল উপকারিতা গুলো একসাথে পাওয়া যাবে। সকালের নাস্তা কিংবা দুপুরে আবার রাতেও এই অ্যাভোকাডো নানা রকম ভাবে খাওয়া যেতে পারে। তবে আপনার যেভাবে ইচ্ছা এবং আপনি যেভাবে পছন্দ করেন সেভাবে খেতে পারেন।

অ্যাভোকাডো ফলের অপকারিতা

অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা গুলো জানা যেমন জরুরী তেমনি পাশাপাশি এর অপকারিতা গুলো আমাদের জানা দরকার। এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে এভোকাডো ফলের এত উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা রয়েছে কিনা। আর থাকলেও সে অপকারিতা গুলো কি।

আসলে অ্যাভোকাডো ফল একটি নিরাপদ ফল তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এবং নিয়মের বাইরে এই ফল খেলে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। চলুন এই অ্যাভোকাডো ফলের কিছু অপকারিতা জেনে নেওয়া যাক। যাদের শরীরে বেশি পরিমাণে এলার্জি রয়েছে কোন কোন ক্ষেত্রে এই অ্যাভোকাডো খাবার ফলে এলার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে চুলকানি, ফোলা বা শ্বাসকষ্টের মত সমস্যা তৈরি হতে পারে।

এজন্য যাদের শরীরে এলার্জি রয়েছে তাদের এই ফল খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। আবার অতিরিক্ত অ্যাভোকাডো খেলে অতিরিক্ত ক্যালরি উৎপাদনের ফলে উচ্চ ক্যালরি এবং চর্বি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই নিয়ম মেনে অ্যাভোকাডো অত্যন্ত জরুরী তা না হলে উপকারের বদলে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

বাণিজ্যিকভাবে অ্যাভোকাডো চাষ পদ্ধতি

বাণিজ্যিক পর্যায়ে অ্যাভোকাডো চাষ করতে হলে আমাদের আগে অ্যাভোকাডো চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান লাভ করতে হবে। অ্যাভোকাডো চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে তারপর এই ফলটি চাষ করলে বাণিজ্যিকভাবে অনেক লাভবান হওয়া সম্ভব বলে আশা করা যায়। কেননা স্বাস্থ্য উপকারিতার কারণে এই অ্যাভোকাডো ফলের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

এটি একটি বিদেশি ফল হওয়ায় বাংলাদেশে এই ফলটি দুর্লভ। অ্যাভোকডো গাছে ফল আসতে সময় লাগে প্রায় ৪-৫ বছর। বর্তমানে ধীরে ধীরে বাংলাদেশেও বাণিজ্যিকভাবে এই ফলের চাষাবাদ শুরু হয়েছে। সারা বাংলাদেশে দশ হেক্টর জমিতে অ্যাভোকাডো চাষ করা হয়। বাংলাদেশে বগুড়া, রাজশাহী, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, এবং খাগড়াছড়িতে বাণিজ্যিকভাবে এই অ্যাভোকাডো চাষ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রতিবছরে অ্যাভোকাডো এর চাহিদা হলো ৬ হাজার টন। বর্তমানে এই ফলের বাজার মূল্য প্রতি কেজি ১৫০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত। তাই বাণিজ্যিকভাবে এই অ্যাভোকাডো চাষ করতে পারলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। তার আগে আমাদের জেনে নিতে হবে অ্যাভাকাডো ফলের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে। নিচে অ্যাভোকাডো ফলের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

মাটিঃ অ্যাভোকাডো উঁচু জায়গাতে বেশি ভালো চাষ হয় কেননা এই গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে না পারায় নষ্ট হয়ে যায়।এজন্য উঁচু জায়গায় চাষ করার পাশাপাশি পানি নিষ্কাশনে ভালো ব্যবস্থা রাখতে হবে। অ্যাভোকাডো দোআঁশ, উর্বর এবং বেলে দোআঁশ মাটিতে ভালো চাষযোগ্য। অ্যাভোকাডো চাষের জন্য মাটির পিএইচ মাত্রা হওয়া উচিত (Ph ৫-৭) ।

আবহাওয়াঃ অ্যাভোকাডো ফল উষ্ণ আবহাওয়া ভালো জন্মে তাই বাংলাদেশে নিঃসন্দেহে এই অ্যাভোকাডো চাষযোগ্য।অ্যাভোকাডো চাষের জন্য গড় তাপমাত্রা ১৩-২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস অনেক উপযোগী।

চারা উৎপাদনঃ অ্যাভোকাডো ফলের চারা এর বীজের মাধ্যমে খুব সহজেই উৎপাদন করা যায়। তবে বীজ থেকে চারা উৎপাদন করে অ্যাভোকাডো চাষ করলে এই গাছে থেকে ফল দিতে একটু বেশি সময় প্রায় ৬-৭ বছর লেগে যাবে। একটি অ্যাভোকাডোর বীজকে কয়েক ভাগে কেটে মাটিতে পুঁতে দিলে প্রত্যেক ভাগ থেকে তারা গজাবে। এক্ষেত্রে একটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে সেটি হল এই ফলের বীজ ফল থেকে বের করার ২-৩ সপ্তাহের মধ্যেই এই ব্রিজের অঙ্কুরোদগুম ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। তাই এই সময়ের আগেই বীজ বপন করে ফেলতে হবে। আবার এই বীজের উপরের আবরণটা সরিয়ে মাটিতে পুঁতে দিলে চারা গজানো সম্ভাবনা বেশি থাকে। বীজ থেকে চারা উৎপাদন ছাড়াও কলম বা গ্রাফটিং পদ্ধতিতে এই গাছের চারা উৎপাদন করা যায়। আবার কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই অ্যাভোকাডো চাষ করার জন্য এই চারা কিনতে পাওয়া যায়।

চারা রোপনঃ চারা বড় হয়ে রোপন করার সময় হয়ে গেলে ৪০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য, ৪০ সেন্টিমিটার প্রস্থ এবং ৬০ সেন্টিমিটার গভীরতা তৈরি করে গর্ত করে নিতে হবে। এরপর এই গর্তে তিন কেজি গোবর, ৬০ গ্রাম ইউরিয়া, ৬০ গ্রাম টিএসপি, ৪০ গ্রাম এমওপি, ১০ গ্রাম জিংক, ১৫ গ্রাম বোরণ, ২০ গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, ১০ গ্রাম জিপসাম মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে কয়েকদিন ফেলে রাখতে হবে। একটি গাছ থেকে আরেকটি কাছে দূরত্ব হবে৮-১০ মিটার। সারগুলো মাটির সাথে ভালোভাবে মিশ্রিত হতে শুরু করলে কয়েকদিন পরে চারা রোপন করতে হবে। তারা রোপন করা হয়ে গেলে এই গাছের পরিচর্যা শুরু করতে হবে। অ্যাভোকাডো গাছের পরিচর্যা সম্পর্কে নিজে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

অ্যাভোকাডো চারার দাম কত

অ্যাভোকাডো চাষ করতে হলে প্রথমেই অ্যাভোকাডো চারার প্রয়োজন হয়। শুধু অ্যাভোকাডো নয়, যে কোন গাছ লাগানোর জন্য প্রথমে চারার প্রয়োজন হয়। চারা ছাড়া কখনো একটি বড় গাছকে পরিকল্পনা করা যায় না।মূলত চারা থেকেই একটি গাছ বড় হয়ে তারপর ফুল ফল দেওয়া শুরু করে। এভোকাডো ঠিক এমনই একটি গাছ যা চাষ করার জন্য প্রয়োজন প্রথমে এই গাছের চারা।

উপরে বীজ থেকে এবং কলম এবং গ্রাফটিং পদ্ধতিতে অ্যাভোকাডো চারা তৈরি করা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। তবে ঝামেলা বিহীন ভাবে অ্যাভোকাডো চাষ করতে হলে এই গাছের চারা সংগ্রহ করতে হবে। অনেকেই চাই যে অ্যাভোকাডো গাছের চারা ক্রয় করে চাষ করবে।তাই অ্যাভোকাডো চারার দাম সম্পর্কে অনেকেই জানতে চাই।

একটি দুই ফুট উচ্চতার অ্যাভোকাডো চারার দাম ৮৫০ টাকা। এছাড়া এর থেকে বড় চারার দাম পর্যায়ক্রমে ১০০০ টাকা, ১২০০ টাকা, ১৩০০ টাকা, ১৫০০ টাকা, ১৬০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। অ্যাভোকাডো চারার দাম এর থেকে কম বেশিও হতে পারে। তবে কোন কোন বৃক্ষমেলাই বড় গাছ অর্থাৎ ফল ধরা গাছও বিক্রি হয়।

তবে এই গাছ গুলোর প্রচুর দাম যেমন ১-২ লাখ টাকার উপরে হয়ে থাকে। চারা সংগ্রহ করার পর সঠিক পদ্ধতিতে রোপন করলে এবং সময়মতো পরিচর্যা নিলে ৪-৫ বছরের ভিতরে অ্যাভোকাডো ফল পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। তবে কোন কোন জাতের অ্যাভোকাডো গাছে এর থেকে বেশি সময়ও লেগে যেতে পারে।

অ্যাভোকাডো গাছের পরিচর্যা

অ্যাভোকাডো চাষ করতে হলে আমাদের অ্যাভোকাডো গাছের পরিচর্যা সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি।কেননা পরিচর্যা ছাড়া কোন গাছ থেকে ফলের আশা করা যায় না। তাই অ্যাভোকাডো চাষ করার জন্য এর পরিচর্যা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে হবে। চলুন এবার অ্যাভোকাডো গাছের পরিচর্যা সম্পর্কে জেনে নিই-

সূর্যের আলোঃ অ্যাভোকাডো গাছ সূর্যের আলোতে ভালো বৃদ্ধি পায় এবং এটি পরোক্ষ সূর্যালোকের সমৃদ্ধ হয়। এই গাছে দিনে অন্তত ৬-৮ ঘন্টা সূর্যের আলোর প্রয়োজন হয়। আপনি যদি ছাদ বাগানে এই গাছ রোপন করেন তাহলে দক্ষিণ মুখী করে রাখবেন যাতে আলো বাতাস বেশি পায়।

সেচ ব্যবস্থাঃ অ্যাভোকাডো গাছ সাধারণত আর্দ্র থাকতে পছন্দ করে তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয়। তাই গাছের গোড়ার মাটি যখন শুকিয়ে যাবে তখন পানি দিতে হবে। আর যদি চলার পথে তার আশঙ্কা থাকে তাহলে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। তাছাড়া জলাবদ্ধতার কারণে গাধারের শিকড় পচে যেতে পারে।

সার প্রয়োগঃ অ্যাভোকাডো গাছে সঠিক সময়ে পানি দেওয়ার পাশাপাশি সার প্রয়োগ করতে হবে।নিকটস্থ কোনো কৃষি কর্মকর্তার সাথে পরামর্শ নিয়ে তারপরে এই গাছে সার প্রয়োগ করুন। এক্ষেত্রে সারের প্যাকেজিং এর নির্দেশনাবলি অনুসরণ করে সার প্রয়োগ করতে হবে।
খুঁটি লাগানোঃ অ্যাভোকাডো গাছে যখন ফল ধরে এবং ফল ধীরে ধীরে মোটা এবং পরিপক্ক হতে শুরু করে তখন এই গাছের ডালগুলো ফলের কারণে অনেক ভারী হয়ে যায়। তাই প্রত্যেকটি গাছের প্রধান প্রধান কয়েকটি ডালে খুটি জাতীয় কোন কিছু যেমন বাশ, যে কোন গাছের ডাল ইত্যাদি দিয়ে হেলান দিন যাতে করে ফলের ভারের কারণে গাছের ডালগুলো ভেঙে না যায়।

উপরে উল্লেখিত উপায়ে এই অ্যাভোকাডো গাছের পরিচর্যা করলে ৪-৫ বছরের ভিতরে এই গাছ থেকে ফল পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। এবং সেই ফল বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব।

লেখক এর শেষ কথাঃ অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা

অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা সম্পর্কে জানলে আপনিও এই ফল খেতে চাইবেন। কেননা এই ফলের এত স্বাস্থ্য উপকারিতা যেগুলো জানলে আপনার এই ফলের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করবে। বিদেশি এই ফলের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।এছাড়াও এই আর্টিকেলে বাণিজ্যিকভাবে অ্যাভোকাডো চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি বাণিজ্যিকভাবে অ্যাভোকাডো চাষ করতে পারেন তাহলে পারিবারিক পুষ্টির যোগান এবং আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবেন।

প্রিয় পাঠক, আর্টিকেলে পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন তাহলে অন্যদের মাঝেও শেয়ার করে দিন যাতে করে তারাও এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে উপকৃত হতে পারে। এছাড়া অন্যান্য বিষয় সঠিক তথ্য পেতে ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করার আমন্ত্রণ রইল। এতক্ষণ ধরে ধৈর্য সহকারে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url