শীতকালীন সবজি চাষ পদ্ধতি। ছাদে শীতকালীন সবজি চাষ পদ্ধতি

পার্সিমন ফলের উপকারিতা। বাংলাদেশে পার্সিমন ফলের চাষ পদ্ধতিশীতকালীন সবজি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আজ আমরা আলোচনা করতে চলেছি। আপনি যদি শীতকালে কিভাবে সবজি চাষ করতে হয় এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়ে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ অব্দি পড়ুন।

শীতকালীন-সবজি-চাষ-পদ্ধতি
প্রত্যেকটি ঋতু বা মৌসুমে কোন না কোন সবজি চাষ করা হয়। তেমনি শীত ঋতুতেও চাষ হয় অনেক শাকসবজি। তবে শীতকালীন সবজি চাষ করার পদ্ধতি সম্পর্কে অনেকেই জানেনা। তাই আজকের এই আর্টিকেলে শীতকালের সবজি চাষ পদ্ধতি সহ কিভাবে ছাদে শীতকালীন সবজি চাষ করতে হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

পেজ সূচিপত্রঃ শীতকালীন সবজি চাষ পদ্ধতি

শীতকালীন সবজি চাষ পদ্ধতি

শীতকালীন সবজি চাষ হলো কৃষিক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা শীতকালে সবজির বেশ চাহিদা থাকে এবং কৃষকরা সবজি বিক্রি করে বেশ লাভবান হতে পারে। অন্যান্য মৌসুমের তুলনায় শীতকালে বেশি পরিমাণে শাকসবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। শীতকাল হলো মূলত শাকসবজি চাষের উপযুক্ত মৌসুম।

শীতকালে অনেক ধরনের শাকসবজি চাষ হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে বাজারে শাকসবজির প্রচুর চাহিদা থাকার কারণে কৃষকেরা শাকসবজি বিক্রি করে প্রচুর টাকা আয় করছে। আবার অনেকে পরিবারের সবজির চাহিদা মেটাতে বাড়ির আঙিনায় এবং ছাদে নানা রকম সবজি চাষ করছে।
আপনি যদি শীতকালে সবজি চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই শীতকালীন সবজি চাষের পদ্ধতি গুলো ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। এই আর্টিকেলে শীতকালীন সবজি কিভাবে চাষ করতে হয় এবং শীতকালীন সবজি চাষের তালিকাসহ ছাদ বাগানে সবজি চাষের পদ্ধতি বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। নিচে এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।

শীতকালীন সবজি চাষের তালিকা

শীতকালীন সবজি চাষের তালিকা সম্পর্কে এখন আমরা জানতে চলেছি। শীতকালে অনেক রকমের সবজি চাষ হয়ে থাকে। অন্যান্য মৌসুমের তুলনায় শীত মৌসুমে বেশি শাক এবং সবজি চাষ করা হয় এবং এর ফলনও ভালো হয়। সবজি চাষের জন্য উপযুক্ত সময় হচ্ছে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত।

এই সময়ের ভিতরে আবহাওয়া ঠান্ডা থাকে এবং বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে তাই এই সময় সবজির ভাল ফলন হয়। তবে বেশ কিছু সবজি অক্টোবর থেকেও চাষ করা যেতে পারে। তাই নিচে অক্টোবর থেকে শুরু করে মার্চ মাস পর্যন্ত শীতকালীন সবজি চাষের একটি তালিকা দেওয়া হলো যাতে করে আপনি আপনার পছন্দমত সবজি চাষ করে পরিবারের সবজি চাহিদা পূরণ এবং আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন।

অক্টোবর-মার্চ মাস পর্যন্ত সময়ে সবজি চাষের তালিকা
  • শিম
  • লাউ
  • বাঁধাকপি
  • ফুলকপি
  • করলা
  • বরবটি
  • টমেটো
  • আলু
  • পেঁপে
  • মিষ্টি কুমড়া
  • চাল কুমড়া
  • শসা
  • শালগম
  • মিষ্টি আলু
  • ধুন্দল
  • পটল
  • ঢেঁড়স
  • বেগুন

শীতকালীন আলু চাষ পদ্ধতি

শীতকালীন একটি সবজি হলো আলু। আলু খায় না এরকম লোক নেই বললেই চলে। শীতকালীন এই সবজি আলু প্রায় সকলেই পছন্দ করে থাকে এবং রান্নায় খেয়ে থাকে। আবার অনেকেই জমিতে আলু চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। তাই আপনি যদি আলু চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হতে চান তাহলে আলু চাষের বেশ কয়েকটি সম্পর্কে জেনে নেওয়া জরুরী। নিচে আলু চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

বীজ নির্বাচনঃ আলু চাষের জন্য প্রথমে আলুর বীজ সংগ্রহ করতে হবে। আলুর বীজ নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে আলুর বীজ যেন পচা না হয়। কেননা পচা আলুর বীজে অঙ্কুরোদগুম হবে না এবং তা থেকে গাছ তৈরি হবে না। তাই ভালো আলোর বীজ নির্বাচন করে সেই বীজ কয়েক টুকরো করে কেটে তারপর লাগাতে হবে।

সেচ প্রয়োগঃ আলুর বীজ লাগানো হয়ে গেলে তারপর জমিতে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। আলু লাগানোর পর যদি জমিতে সেচ না দেওয়া হয় তাহলে ধীরে ধীরে বীজগুলো শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাবে।

সার প্রয়োগঃ আলুর বীজ লাগানোর পর শেষ দেওয়া হয়ে হলে কয়েক সপ্তাহ পর যখন আলুর গাছগুলো বড় হয়ে যাবে তখন জমিতে সারের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও কয়েকবার সেচ দেওয়ার আগে জমিতে সার প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।

আগাছা দমন ও কীটনাশক প্রয়োগঃ আলুর গাছ যখন বড় হবে তখন জমিতে আগাছা বের হবে।প্রত্যেকটি ফসলের ক্ষেত্রেই এই আগাছা দমন করা অত্যন্ত জরুরী। কেননা আগাছা দমন না করলে সার এবং অন্যান্য পুষ্টি গুলো আগাছায় খেয়ে নেবে। তাই এ আগাছা গুলো নিড়ানি দিয়ে দমন করে দিতে হবে। এছাড়াও আলুর গাছ বড় হলে এতে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে কেননা আলুর গাছে এবং পাতায় নানা ধরনের প্রকার উপদ্রব দেখা দেয়। এই পোকার উপদ্রব থেকে আলুর গাছকে রক্ষা করার জন্য জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।

শীতকালীন শিম চাষ পদ্ধতি

শিম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বলতে গেলে শিম হলো একটি পুষ্টিকর সবজি। শীতকালের অন্যান্য সকল সবজির ভিতরে শিম একটি জনপ্রিয় সবজি। বর্তমান সময়ে অনেকেই এই শিম চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। শিম চাষ মূলত বীজ বপণের মাধ্যমে হয়ে থাকে। শিম চাষের জন্য বীজ বপণের উপযুক্ত সময় হচ্ছে শ্রাবণ মাস।
তবে আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাসের ভিতরও বীজ বপন করা যায়। চাষ করার জন্য সিমের অনেকগুলো জাত রয়েছে। যেমন- বারি শিম-১, বারি শিম-২, বারি শিম-৩, বারি শিম-৪, বারি শিম-৫, বারি শিম-৬, বারি শিম-৭, বারি শিম-৮ ইত্যাদি। তবে বারি শিম-১ এবংবারি শিম-২ চাষ করার জন্য বেশ ভালো। শিম চাষ করার জন্য যাবতীয় পদ্ধতি গুলো নিচে তুলে ধরা হলো-

বীজ নির্বাচনঃ বীজ বপনের পূর্বে একটা জিনিস লক্ষ্য রাখতে হবে যে বীজগুলো যেন ভালো হয়।কেননা নষ্ট বীজে চারা অঙ্কুরোদগম করে না।

মাদা তৈরি এবং সার প্রয়োগঃ শিম চাষের জন্য বীজ বপন করা লাগে আর বীজ বপনের জন্য মাদা তৈরি করতে হয়। মাদা তৈরির জন্য একটি থেকে আরেকটি সারির দূরত্ব এক মিটার হতে হবে। এবং প্রত্যেকটি সারিতে ৫০ সেন্টিমিটার দূরত্বে একটি করে মাদা তৈরি করতে হবে। প্রত্যেকটি মাদা ৪৫ সেন্টিমিটার করে চওড়া এবং ৪৫ সেন্টিমিটার করে লম্বা এবং ৪৫ সেন্টিমিটার গভীরতা করে তৈরি করতে হবে। মাদা তৈরি হয়ে গেলে এই মাটির সাথে ১০ কেজি গোবর সার, ১০০ গ্রাম এমওপি এবং ১৫০ গ্রাম টিএসপি সার ভালোভাবে মিশিয়ে ৫ সেন্টিমিটার উঁচু করে মাদা তৈরি করতে হবে।

বীজ বপনঃ জমিতে বীজ বপনের পূর্বে শিমের বীজ ১০-১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং তারপর মাটিতে বপন করতে হবে। প্রত্যেকটি মাদায় ৪-৫ টি করে বীজ বপন করতে হবে। এরপর যখন চারা গজাবে তখন প্রত্যেকটি মাদাতে ৩ টি করে শিমের চারা রাখতে হবে।

সেচ প্রয়োগঃ জমিতে সঠিক জো আসলে তখন সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে বৃষ্টির পানি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে সেচ দেওয়ার পর পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। জমিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকলে বৃষ্টির পানি অথবা সেচ দেয়া পানির পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে চারার ক্ষতি হতে পারে।

মাচা বা বাউনি তৈরি করাঃ শিম গাছ ১৫-২০ সেন্টিমিটার লম্বা হলে তখন জমিতে মাচার ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা একটি শিম গাছ যত বড় এবং বাওয়ার সুযোগ পায় তত বেশি দ্রুত বড় হয় এবং ফলনও বেশি হয়। এইজন্য জমিতে মাচা দেওয়ার সময় হলে প্রত্যেকটি মাদার পাশে একটি করে বাসের কঞ্চি পুতে দিতে হবে যাতে করে চারাগুলো বাসের কঞ্চির সাহায্যে মাচা বাউনিতে উঠতে পারে। জমিতে মাচা দেওয়ার কারণে প্রত্যেকটি শিম গাছে অধিকতর ফুল এবং ফল ধরে যার ফলে ফলন বেশি হয়।

কীটনাশক প্রয়োগঃ শিম গাছ যখন বড় হয়ে যাবে অর্থাৎ মাচা বা বাউনিতে উঠে পড়বে তখন শিম গাছে নানা রকম পোকার উপদ্রব দেখা দিতে পারে। এজন্য এসব প্রকার উপদ্রব থেকে শিম গাছকে রক্ষা করতে কীটনাশক বিক্রেতার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে শিম গাছের জন্য উপযোগী কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

মুলা চাষ পদ্ধতি

শীতকালীন সবজির ভিতরে আরেকটি সবজি হলো মূলা। অনেকে এই মূলা পছন্দ করে আবার অনেকেই করে না। তবে মনে রাখতে হবে প্রত্যেকটি সবজিরই আলাদা আলাদা গুণাগুণ রয়েছে যার কারণে প্রত্যেকটি মৌসুমের সবরকম সবজি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো।
শীতকালীন-সবজি-চাষ-পদ্ধতি
অনেকে এই মুলা চাষ করে বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে ভালই লাভবান হচ্ছে। কেননা অল্প সময়ে এই মুলা চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। নিচে মূলা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

জমি তৈরিঃ জমিতে দুই রকম ভাবে মুলা চাষ করা যায় যেমন বেড আকারে এবং জমিতে সরাসরি বপন করে। এক্ষেত্রে কেউ চাইলে দুই ভাবেই এই মূলা চাষ করতে পারে। মুলার বীজ বপনের পর মাটি দিয়ে ভালোভাবে বীজ ঢেকে দিতে হবে।

সেচ প্রয়োগঃ বীজ বপনের পর সেচ দিতে হবে। ১০-১২ দিন পর পর সেচ দেয়া উত্তম। এভাবে ৩-৪ বার সেচ দিলেই হবে। সেচ দেয়ার পর লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে জমিতে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকে।কেননা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকলে বৃষ্টির পানির কারণে অথবা সেচের পানি বেশি হয়ে গেলে বীজ পচে যেতে পারে।

চারা পাতলা করনঃ চারা বড় হয়ে গেলে মাঝে মাঝে যারা পাতলা করে দিতে হবে। মুলার চারা পাতলা করা না হলে মূল পর্যাপ্ত পরিমাণ বড় এবং মোটা হবে না। মুলার ওজন বেশি এবং বড় করার জন্য চারা পাতলা করন করা অত্যন্ত জরুরী।

শীতকালীন বাধা কপি চাষ পদ্ধতি

শীতকালীন বাঁধাকপি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বলতে গেলে এটি একটি শীতকালীন সবজি। শীতকালে এই বাঁধাকপির চাষ বেশি হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে কেউ কেউ অসময়েও এই বাঁধাকপির চাষ করে আসছে। বাঁধাকপির চাষ যদি ভালো হয়ে থাকে বাজারে বাঁধাকপির চাহিদা যদি বেশি হয়ে থাকে তাহলে প্রতি বিঘাতে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
আবার কখনো কখনো বাজারে এই বাঁধাকপির চাহিদা অনেক বেশি থাকলে এর থেকেও অনেক বেশি দাম হয়ে থাকে। তাই বাঁধাকপি চাষ করে যদি কপির চাষ ভালো হয় এবং পর্যাপ্ত দাম পাওয়া যায় তাহলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। নিচে বাঁধাকপি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

বীজ থেকে তারা তৈরিঃ বাধাকপি চাষ করার জন্য চারার প্রয়োজন হয়। সেজন্য প্রথমে বীজ থেকে চারা উৎপাদন করতে হয়। প্রথমে বেড তৈরি করে নিতে হবে তারপর সেই বেডে বাঁশের তৈরি খাজ কাটা একটি লাঠি দিয়ে বেডের উপর চাপ দিয়ে ছোট ছোট গর্ত করে নিতে হবে। এরপর প্রত্যেকটি গর্তে একটি করে ফেলে দিতে হবে। বীজ ফেলা হয়ে গেলে মাটি দিয়ে ভালোভাবে গর্তগুলো পূরণ করে দিতে হবে।এরপর বেডের উপর পানি ছড়িয়ে দিতে হবে। চারা বড় না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই বেডের উপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পানি দিতে হবে। চারা বড় হয়ে গেলে ড্রেন সিস্টেম করে পানি দেওয়া যেতে পারে।

চারা লাগানোর জন্য জমি তৈরিঃ বাঁধাকপি চাষ করার জন্য জমিতে বেশ কয়েকটি ভালোভাবে চাষ দিয়ে নিতে হবে। চাষ দেওয়ার পর জমিতে মই দিতে হবে যাতে জমির মাটি গুলো ঝুরঝুর এবং সমান হয়।

চারা লাগানোঃ বেডের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় হয়ে গেলে বেড থেকে প্রত্যেকটি চারা তুলে ফেলতে হবে। এরপর চারা লাগানোর জন্য প্রথমে এক হাত চার আঙ্গুল মাপ নিয়ে কাঠি তৈরি করতে হবে। এবং সেই কাঠি অনুযায়ী দড়ি ধরে সোজা করে দাগ টানতে হবে। অর্থাৎ একটি লাইন থেকে আরেকটি লাইনের দূরত্ব হবে এক হাত চার আঙ্গুল। আর যারা লাগানোর সময় একটি থেকে আরেকটি চারা দূরত্ব হবে এক হাত অথবা মুঠো হাত। শীতকালীন বাঁধাকপি চাষ করার জন্য এক হাত দূরত্ব অনুযায়ী চারা লাগানোই উত্তম।

সেচ প্রয়োগঃ চারা লাগানো হয়ে গেলে জমিতে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে এবং জমিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে করে বৃষ্টির পানি এবং সেচের পানি বেশি হয়ে গেলে নিষ্কাশন করার সুবিধা থাকে।

সার এবং বিষ প্রয়োগঃ চারা লাগানোর পর চারা বড় হলে এবং জমিতে জো আসলে পরবর্তী সেচের আগে সার দিতে হবে। এছাড়াও কপিতে পোকার উপদ্রব দেখা দিলে কীটনাশক সহ অন্যান্য বিষ প্রয়োগ করতে হবে।

ফুলকপি চাষ করার জন্য বাঁধাকপি চাষের এই একই পদ্ধতি অবলম্বন করলেই হবে। কেননা বাঁধাকপি এবং ফুলকপি চাষ করার পদ্ধতি একই।

শীতকালীন টমেটো চাষ পদ্ধতি

টমেটো চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বলতে গেলে টমেটো একটি শীতকালীন জনপ্রিয় সবজি যা বাজারে প্রচুর চাহিদা থাকে। শীতের সময় বাজারে টমেটোর প্রচুর চাহিদা থাকার কারণে টমেটো চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। চাষ করার জন্য বর্তমানে টমেটোর অনেক জাত রয়েছে। টমেটো চাষের উপযুক্ত সময় হচ্ছে অক্টোবর মাসের শেষের দিক থেকে শুরু করে নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে।
টমেটো দুই ভাবে চাষ করা যায়। অনেকে দেখা যায় টমেটোর চারা ক্রয় করে তারপর জমিতে রোপন করে। আবার কেউ কেউ সরাসরি বেড আকারে জমিতে বপন করে। তাই আপনি যেভাবে খুশি সেভাবেই টমেটো চাষ করতে পারেন। টমেটো চাষের আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

জমি তৈরিঃ টমেটো চাষের জন্য জমি চাষ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য টমেটো রোপনের পূর্বে প্রথমে ৪-৫ টি চাষ এবং মই দিয়ে নিতে হবে। এমন ভাবে চাষ এবং মই দিতে হবে যাতে চাষের মাটি ঝরে ঝরে এবং সমান হয়।

চারা রোপণঃ জমি তৈরি হয়ে গেলে চারা রোপন করতে হবে। জমিতে দুইভাবে চারা রোপন করা যায়।প্রথমত বেড তৈরি করে রোপন করে আর দ্বিতীয়ত সরাসরি জমিতে রোপন করে।

সেচ প্রয়োগঃ চারা রোপন করা হয়ে গেলে তারপর জমিতে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। সেচ দেওয়ার সময় একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে জমিতে যেন পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকে। কেননা টমেটো বেশি পানি সহ্য করতে পারে না। বৃষ্টির পানি অথবা জমির সেচের পানি বেশি হয়ে গেলে চারা পচে যেতে পারে।

সার এবং কীটনাশক প্রয়োগঃ জমিতে প্রত্যেকবার সেচ দেওয়ার আগে সার দিতে হবে। এছাড়াও টমেটো গাছে পোকার উপদ্রব দেখা দিলে টমেটো গাছে কীটনাশক সহ উপকারী বিষ প্রয়োগ করতে হবে।

শীতকালীন লাউ চাষ পদ্ধতি

লাউ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বলতে গেলে এটি একটি লাভজনক চাষ বলা চলে। শীতকালে অন্যান্য সবজির চাহিদা থাকার পাশাপাশি লাউ এরও রয়েছে অনেক চাহিদা। লাউ এর পাশাপাশি লাউয়ের শাক এরও রয়েছে অনেক চাহিদা। তাই লাউ চাষ করে অল্প সময়ের ভিতরে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব বলে আশা করা যায়। বর্তমান সময়ে লাউ চাষে লাভবান হওয়ার ফলে অনেকে জমিতে এবং পুকুর পাড়ে লাউ চাষ করছে এবং এই পদ্ধতিটি অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
তবে শীতকাল ছাড়াও অন্যান্য সময়েও লাউ এর চাষ হয়ে থাকে। লাউ চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য একটি জিনিস মাথায় রাখতে হবে সেটা হচ্ছে যে, যে এলাকার বাজারে যে ধরনের লাউ এর চাহিদা বেশি সেই জাতের লাউ চাষ করতে হবে। লাউ চাষের উপযুক্ত সময় হচ্ছে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস। নিচে লাউ চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

বীজ নির্বাচনঃ লাউ চাষের জন্য উন্নত মানের বীজ বাছাই করতে হবে। এছাড়াও বীজ বাছাইয়ের সময় ভালো এবং সুস্থ বীজ নির্বাচন করতে হবে। কেননা নষ্ট বীজ থেকে চারা গজাবে না। তাই জমিতে বীজ বপনের পূর্বে ভালো বীজ নির্বাচন করতে হবে।
লাউ চাষের জন্য জমি চাষ এবং মাদা তৈরিঃ লাউ চাষের জন্য জমির চাষ অত্যন্ত ভালো হওয়া দরকার কেননা লাউ এর শিকড় অনেক দূরবর্তী যায় যার কারণে জমি চাষ ভালো না হলে লাউ গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। জমি চাষ হয়ে গেলে এরপর জমিতে বীজ বপনের জন্য মাদা তৈরি করতে হবে।

বীজ বপনঃ প্রত্যেকটি মাদায় ৪-৫ টি করে বীজ বপন করতে হবে। এরপর চারা যখন বড় হয়ে যাবে তখন তার ভেতর থেকে ১/২ টি চারা তুলে দিতে হবে যাতে চারাগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণ বড় হতে পারে।

মাচা বা বাউনি তৈরিঃ লাউ গাছ যখন বড় হতে শুরু করবে তখন লাউ গাছের মাদায় একটি করে বাঁশের কঞ্চি পুতে দিতে হবে যাতে করে লাউ গাছ উপরে সোজাসুজি উঠতে পারে। এছাড়াও লাউ গাছের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মাচা তৈরি করা। লাউ গাছ পর্যাপ্ত পরিমাণ বড় হয়ে গেলে জমিতে মাচা বাউনি তৈরি করতে হবে। মাচা তৈরি করে দিলে লাউ এর ফলন বেশি হয়। লাউ গাছ মাচায় উঠে গেলে তখন নিচের পচা পাতাগুলো ভেঙে দিতে হবে এতে গাছের দ্রুত বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়।

সার এবং কীটনাশক প্রয়োগঃ লাউ গাছে সেচ দেওয়ার পূর্বে জমিতে সারের ব্যবস্থা করতে হবে এবং লাউ এর পাতায় পোকার আক্রমণ দেখা দিলে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

ছাদে শীতকালীন সবজি চাষ পদ্ধতি

শীতকালে ছাদে সবজি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে এখন আমরা জানতে চলেছি। জমিতে যেমন শাকসবজি চাষ করা যায় ঠিক তেমনি ছাদে ও শাকসবজি চাষ করা সম্ভব। ছাদে শাকসবজি চাষ করার অনেকগুলো সুবিধা রয়েছে। ছাদে শাকসবজি চাষ করলে নির্ভেজাল সবজি পাওয়া যায় এবং পরিবারের চাহিদা পূরণ করা যায়। বর্তমানে ছাদে শাকসবজি চাষ অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
শীতকালীন-সবজি-চাষ-পদ্ধতি
গ্রামে সকলে জমিতে শাকসবজি চাষ করলেও শহরাঞ্চলে লক্ষ্য করা যায় যে পর্যাপ্ত জমির অভাবে অনেকেই ছাদের উপরে শাকসবজি সহ নানা ধরনের গাছ-গাছালি রোপন করে। গ্রামের মানুষ অনেকে বাড়ির ছাদে সবজি অথবা গাছ লাগানো ঝামেলা মনে করে তবে শহরের মানুষ বাড়ির ছাদে শাকসবজি চাষ এবং গাছ লাগানো অনেক পছন্দ করে।
তাই আপনি চাইলে ছাদে শীতকালীন সবজি চাষ করে পরিবারের সবজির চাহিদা পূরণ করতে এবং ভেজালমুক্ত সবজির স্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন। শীতকালে ছাদে নানা ধরনের সবজি উৎপাদন করা যায় যেমন- আলু, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওল কপি, শসা, গাজর, মুলা, লাউ ইত্যাদি। ছাদে খুব সহজেই এসব সবজিগুলো উৎপাদন করা সম্ভব। তবে ছাদে শাকসবজি উৎপাদন করার জন্য কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমন-

  • ছাদে শাকসবজি চাষের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ মাটির ব্যবস্থা করতে হবে
  • ছাদে সবজি চাষ করার জন্য বেশি পরিমাণে পরিচর্যা করতে হবে। কেননা মাটিতে চাষ করলে মাটি থেকে প্রয়োজনীয় সকল উপাদান গাছ গ্রহণ করতে পারে তবে টবে বা ছাদে চাষ করলে সেইসব উপাদানগুলো গাছ মাটি থেকে গ্রহণ করতে পারে না তাই একটু দেখাশোনা এবং বেশি যত্নের প্রয়োজন হয়।
  • ছাদে শাকসবজি চাষ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির ব্যবস্থা করতে হবে এবং পানি নিষ্কাশনেরও ব্যবস্থা করতে হবে।
  • ছাদে সবজি চাষ করার জন্য রাসায়নিক সারের পরিবর্তে বেশি পরিমাণে জৈব সার ব্যবহার করতে হবে এবং কীটনাশক এর পরিবর্তে জৈব কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে যাতে সবজি ভেজাল মুক্ত এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হয়।

লেখক এর শেষ কথাঃ শীতকালীন সবজি চাষ পদ্ধতি

শীতকালীন সবজি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আমাদের কম বেশি ধারণা থাকা প্রয়োজন কেননা আমাদের দৈনন্দিন খাবারের চাহিদায় শাকসবজি অন্যতম। এছাড়াও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য শাকসবজি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান লাভ করা জরুরী।

প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলে আমি শীতকালের সবজি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে এবং ছাদ বাগানে শাকসবজি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন তাহলে অন্যদের মাঝেও শেয়ার করে দিন যাতে তারাও উপকৃত হতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য বিষয়ে সঠিক তথ্য পেতে ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করার আমন্ত্রণ রইল। এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url